Monday, December 30, 2019

Frequently Misused Words

গত তিন বছরে আমার শোনা কিছু শব্দ যেগুলোকে আমি নিয়মিত ভুলভাবে প্রয়োগ হতে দেখেছি সেগুলা লিখব। এই শব্দগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ এবং তাৎপর্য আছে। আপনি যখন না বুঝে এই শব্দগুলো ব্যবহার করবেন তখন এই শব্দগুলোর সাথে জড়িত ব্যক্তি এবং কাজগুলোর প্রতি অন্যায় করা হয়। ইংরেজি বর্ণানুক্রমে লিখছি।
1. Autistic:
একজন ব্যক্তি অটিস্টিক মানে তার অটিজম নামের ডেভেলপমেন্ট ডিজর্ডার আছে। এই ডিজর্ডারের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ আছে। অটিস্টিক শিশুরা সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন করতে বেগ পায়, এরা প্রায়ই একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে, শব্দের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় অসহনশীলতা থাকতে পারে এদের। কিন্তু একজন অটিস্টিক ব্যক্তি কখনোই উন্মাদ কিংবা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন নন। আপনি যখন বুদ্ধিহীন কিংবা বিচিত্র বুঝাতে কাউকে অটিস্টিক বলে সম্বোধন করেন, তখন আপনার সীমিত জ্ঞান যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি অটিস্টিক ব্যক্তিদেরকেও অপমান করা হয়।
2. Depression:
ডিপ্রেশন মানে মন খারাপ না। ডিপ্রেশন একটা মানসিক ডিজর্ডার যেখানে একজন ব্যক্তি স্থায়ীভাবে বিষন্নতা ও শূন্যতাবোধের ভেতর দিয়ে যান। ডিপ্রেশনের মাত্রাভেদে একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবন বিভিন্নভাবে অচল হয়ে যেতে পারে।
3. Feminist:
ফেমিনিস্টের বাংলা হচ্ছে নারীবাদী। অনেকে মনে করেন যেসব নারী বড় বড় কথা বলে তারা নারীবাদী, কিংবা যারা নারী অধিকার নিয়ে কথা বলেন তারা নারীবাদী। অনেকে এটাও ভাবেন যে নারীবাদ মানে পুরুষদের ঘৃণা করা। এর সব কটাই ভুল/অসম্পূর্ণ ধারণা। একজন ফেমিনিস্ট ব্যক্তি সকল জেন্ডারের সমতা চান। যেহেতু নারীর প্রতি বৈষম্য থেকে সমতার জন্য লড়াইটা শুরু হয়েছে, সেহেতু এর নাম হয়েছে নারীবাদ। কিন্তু নারীবাদী হতে পারেন নারী, পুরুষ কিংবা ভিন্ন জেন্ডারের যে কেউ। এখানে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা জেন্ডারের প্রতি কোনোরকম ঘৃণা জড়িত নেই। নারীবাদের শত্রু পুরুষ নয়। নারীবাদের শত্রু হচ্ছে পুরুষতন্ত্র। পুরুষতন্ত্র হচ্ছে একটা সিস্টেম যেখানে নির্ধারিত কিছু নিয়মের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভেদ বজায় রাখা হয়। একজন পুরুষও পুরুষতন্ত্রের ভিকটিম হতে পারেন এবং একজন নারীও পুরুষতান্ত্রিক হতে পারেন। পরেরবার যখন কাউকে নারী অধিকার নিয়ে কথা বলতে দেখবেন, আগে যাচাই করে নেবেন তিনি সব জেন্ডারের সমতা চান কি না। সমতা না চাইলে, ঘৃণার কথা বললে তিনি নারীবাদী নন।
4. Introvert:
ইন্ট্রোভার্টের বাংলা হচ্ছে অন্তর্মুখী। এটা কোনো মানসিক বা সামাজিক সমস্যা না। এইটা একটা পারসোনালিটি টাইপ। কিছু মানুষ হৈচৈ পছন্দ করে। কিছু মানুষ চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। যারা চুপচাপ থাকতে, একা থাকতে পছন্দ করে তাদের অনেকেই ইন্ট্রোভার্ট। এটা তাদের ব্যক্তিত্বের অংশ। যার ব্যক্তিত্ব যেমন তাতে সেভাবে গ্রহণ করুন।
5. Narcissist:
ফেসবুকে সেলফি দিয়ে ক্যাপশনে নার্সিসিস্ট লিখে নিজেকে খুব খুউল ভাবছেন? ভাইবেন না। নার্সিসিজম একটা পারসোনালিটি ডিজর্ডার। নার্সিসিস্ট ব্যক্তিরা প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক, ঈর্ষাপরায়ণ এবং দাম্ভিক হন। এরা অন্যের প্রতি কোনো সহানুভূতি ধারণ করেন না। আপনি যদি এমন না হয়ে থাকেন, তাহলে শুধু শুধু নিজের প্রতি ভালোবাসাকে নার্সিসিজমের নাম দিয়েন না। নিজের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা ভালো ব্যাপার। নার্সিসিজম ভালো ব্যাপার না। আপনি যদি সত্যিই নার্সিসিস্ট হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে বদলান। এটা গর্ব করার কিছু না।
6. OCD:
পুরো ফর্মটা হচ্ছে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজর্ডার। বাংলায় বলে শুচিবাই। ভীষণ খুঁতখুঁতে হওয়া, বারবার একই কাজ করা ওসিডির কিছু লক্ষ্মণ। কিন্তু খাবার, পোশাক কিংবা অন্যকিছু নিয়ে নির্দিষ্ট পছন্দ/অপছন্দ থাকা মানে এই না যে আপনার ওসিডি আছে। ওসিডি একটা গুরুতর সমস্যা। কথায় কথায় ব্যবহার করে শব্দটাকে খেলো করে দেবেন না।
7. Schizophrenia:
কারো কথা বা কাজ আপনার সাথে মিলছে না বলে তাকে স্কিজোফ্রেনিক বলবেন না, প্লিজ। স্কিজোফ্রেনিয়া একটা ভয়ংকর বাজে মানসিক রোগ। এই রোগে একজন মানুষ অসংলগ্ন চিন্তা করেন, কথা বলেন এবং কাজ করেন। একজন স্কিজোফ্রেনিক ব্যক্তি পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারেন না, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। আপনি যদি কোনো সত্যিকারের স্কিজোফ্রেনিক ব্যক্তিকে চিনে থাকেন তার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। কারণ মানুষটা নিঃসন্দেহে প্রচণ্ড কষ্টে থাকেন।
8. Secular:
ইদানীং দেখছি সেকুলারিজমকে নাস্তিকতার বিকল্প হিসেবে এবং সেকুলার শব্দটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করেন কেউ কেউ। সেকুলারিজম মানে ধর্মনিরপেক্ষতা। একজন সেকুলার ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না। একটা রাষ্ট্র যখন সেকুলার হয়, তার মানে সেই রাষ্ট্রে সকল ধর্ম সমান মর্যাদা পায়। একজন নাস্তিক ব্যক্তিও একটা সেকুলার রাষ্ট্রে নিরাপত্তা ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু সেকুলারিজম মানে নাস্তিকতা না। আপনি নিজের ধর্ম পালন করে যদি ভিন্ন বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের সাথে সহাবস্থান করতে পারেন, তার মানে আপনি সেকুলার ধারার মানুষ।

এমন অপপ্রয়োগের শিকার শব্দ আরো আছে নিশ্চয়ই। ইন্টারনেটের যুগে তথ্য অত্যন্ত সুলভ। কোনো নতুন শব্দ ব্যবহার করার আগে চট করে গুগল করে নিন। তাহলে আপনাকে আর বোকা বোকা কথা বলে বিব্রত হতে হবে না। :)

(এই পোস্টটা প্রথমে ফেসবুকে লিখেছিলাম আমি। সেটা আশাতীত সাড়া পাওয়ায় ব্লগে টুকে রাখলাম, যাতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।)

বিজনেস ক্লাস

প্লেনের বিজনেস ক্লাস নিয়ে আমার আগ্রহ ছিলো অনেকদিন থেকেই। মধ্যবিত্ত বাঙালি যখন সরকারি সফরে বিজনেস ক্লাস পায়, তখন কায়দা করে টিকেটের ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে দেখেছি (ছবির মতো)।

বন্ধুর মা-বাবা হজ্জে যাওয়ার সময় যে বিজনেস ক্লাসে গেছেন সেই গল্প কায়দা করে বলতে শুনেছি। বাংলাদেশের একজন সেলিব্রেটি রাঁধুনিকে বলতে শুনেছি তিনি যখন বিজনেস ক্লাস থেকে বের হচ্ছিলেন তখন ইকোনমি ক্লাসের এক যাত্রী তার ছবি তুলে কী ভীষণ 'উদ্ধত' আচরণ করেছিল। এসব দেখে আমার জানার ইচ্ছা ছিলো বিজনেস ক্লাসের বিশেষত্ব। এবার এমিরাতস এয়ারলাইনস রীতিমতো যেচে পড়ে আমাকে বিজনেস ক্লাসে তুলে দেওয়ায় সেই ইচ্ছাটা পূরণ হলো। আমার মতো যাদের এ ধরনের হাভাতে কৌতূহল আছে তারা বাকিটা পড়তে পারেন। এবার আমি সফরের প্রথম অংশ এমিরাতসের ইকোনমি ক্লাসে উড়েছি, দ্বিতীয় অংশে উড়েছি বিজনেস ক্লাসে। এই দুইয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরব।



Space:
বিজনেস ক্লাসে বসার জায়গা বড়। সামনে পিছে, ডানে বামে সবদিকেই। সিট হেলিয়ে দিলে পেছনের যাত্রীর বুকের উপর চড়াও হতে হয় না। সুইচ টিপলে পা ছড়িয়ে দেওয়ার জায়গা তৈরি হয়ে যাবে। আরামে ঘুমানো যাবে। আমি সমস্যায় পড়েছি স্ক্রিন নিয়ে। জায়গা বেশি বলে টিভি স্ক্রিন বসার জায়গা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। শুরুতে আমার রিমোট কাজ করছিল না। ফলে টাচস্ক্রিন ছুঁয়ে ছুঁয়ে চ্যানেল বদলানোর জন্য আমাকে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পিঠ বাঁকিয়ে স্ক্রিনের কাছে যেতে হচ্ছিল। ইকোনমি ক্লাসে স্ক্রিন ছোট হলেও একদম চোখের সামনে থাকে। সেই স্ক্রিনে আমি আরামে চারটা মুভি দেখে ফেলেছিলাম আগেরবার। বিজনেস ক্লাসে একটা দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
Privacy:
বিজনেস ক্লাসের প্রাইভেসি বেশি। দুই সিটের মাঝে হালকা দেয়াল থাকে। যদিও বিজনেস ক্লাসে আমার বাম পাশে বসা বাঙালি ভাইটি পুরো পথ দেয়াল ডিঙিয়ে আমাকে আড়চোখে দেখে গেছেন এবং আমার চ্যাগায় রাখা পায়ে লাথি দিয়ে দিয়ে টয়লেটে গেছেন। তবে তিনি ইকোনমি ক্লাসে সামনের সিটে বসা ভাইটির মতো সিটে হাত রাখতে গিয়ে বারবার আমার টিভি স্ক্রিনে হানা দিতে পারেন নাই।
Hospitality:
বিজনেস ক্লাসের ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টরা অতিরিক্ত আন্তরিক। সিটে বসতে না বসতেই এসে জিজ্ঞেস করবে আমি কিছু খাবো কি না। ইকোনমি ক্লাসে যেখানে চেয়েও পানি পাওয়া যায় না, গলা শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেলে উঠে গিয়ে পানি আনতে হয়, সেখানে বিজনেস ক্লাসে যেচে এসে পানি টানি দিয়ে যাওয়াটা একটু বেশিই ইয়ে লাগে। একবার ধাক্কা লেগে আমার জুসসমেত গ্লাস ফেলে দিলাম মেঝেতে। ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট মিষ্টি হাসি দিয়ে এসে মুছেটুছে আরেক গ্লাস জুস রেখে গেল। আমি সরি টরি বলে অস্থির। সে মিষ্টি হেসে বললো, এটা কোনো ব্যাপার না। অথচ ইকোনমি ক্লাসে এক বাচ্চা আইলে বমি করে দিয়েছিল বলে ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট সেটা পরিষ্কার করতে করতে শক্তমুখে বলছিল, "Stay where you are. I am trying to clean it." ফ্লাইট এটেন্ডেন্টের কষ্ট দেখে সহানুভূতি হয়েছিল আমার। বিজনেস ক্লাসের ফ্লাইট এটেন্ডেন্টদের আদরযত্ন দেখে উলটা মরমে মরে গেছি।
Food:
বিজনেস ক্লাসে খাবারের মান এবং অপশন বেশি। ইকোনমি ক্লাসে প্ল্যাকেটজাত জুস দেয়। বিজনেস ক্লাসে দেয় ফ্রেশ জুস। বিজনেস ক্লাসে শ্যাম্পেইন থাকে। আরো থাকে ওয়াইন আর ককটেইলের অনেক অপশন। ইকোনমি ক্লাসে বড়জোর ওয়াইন থাকে। তাও সবখানে না। অ্যাপেটাইজার, মেইন কোর্স, ডেজার্ট সবকিছুতেই বিজনেস ক্লাসে অপশন বেশি। খাবারের সাজসজ্জাও বেশি।
Lavatory:
টয়লেট দুই ক্লাসেই এক। আমি বিজনেস ক্লাসে আরেকটু বড় টয়লেট আশা করেছিলাম।
Others:
ইকোনমি ক্লাসে খাবারের সাথে প্যাকেটজাত ওয়েট ওয়াইপ দেয় একটা করে। বিজনেস ক্লাসে ওঠার পরপরই দেয় একটা ভাপ দেওয়া ওয়েট টাওয়েল। খাবারের সাথে আসে আলাদা ন্যাপকিন। বিজনেস ক্লাসে খাবার দেওয়ার আগে ফ্লাইট এটেন্ডেন্টরা নিজ দায়িত্বে এসে টেবিল পেতে দিয়ে তাতে চাদর বিছিয়ে দেবে। ইকোনমি ক্লাসে কোনো চাদরের বালাই নাই। খাবার এলে নিজ দায়িত্বে টেবিল খুলে নিতে হবে। বিজনেস ক্লাসের হেডফোনের মান ইকোনমি ক্লাসের থেকে ভালো। বিজনেস ক্লাসের কম্বল দুই পরতের। ইকোনমি ক্লাসে এক পরতের। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইকোনমি ক্লাসে গুডি ব্যাগ দেয়, যার ভেতরে মোজা, আইপ্যাচ, টুথব্রাশ ইত্যাদি থাকে। বিজনেস ক্লাসে এই জিনিস দেয় নাই। আমি ভেবেছিলাম আরো ভালো মানের গুডি ব্যাগ হয়ত দেবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি কি আবারো বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করতে চাইবো?
প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ডজন তিনেক ইকোনমি ক্লাস এবং একখানা বিজনেস ক্লাসের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, নিজের পয়সায় অদূর ভবিষ্যতে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণের সম্ভাবনা নাই। কয়েক ঘণ্টার জন্য তুলনামূলকভাবে একটু ভালো কম্বল, একটু ভালো খাবার, কয়েক ইঞ্চি বেশি জায়গা আর একটু বেশি আদরযত্নের জন্য এত টাকা খরচ করতে আমি এখনো প্রস্তুত না। বিশেষ করে টাকা দিয়ে আদরযত্ন কেনার ব্যাপারটা আমার মধ্যে অস্বস্তি জাগিয়েছে। এবার আমি ফ্রিতে বিজনেস ক্লাসে চড়ে বসেছি বটে। ফ্লাইট এটেন্ডেন্টরা তো সেটা জানত না। তারা তাদের কাজ করেছে। ইকোনমি ক্লাসে অভ্যস্ত আমি ক্লাস দিয়ে ভালো ব্যবহার পেয়ে শেখ সাদীর মতো অনুভব করেছি। এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা আপাতত নাই।