আমার মনে হয় একটা শহরের সৌন্দর্য তার নাইট লাইফে। আমার চোখে ঢাকা সবচেয়ে সুন্দর রাত ১২টার পরে, ভোর ৬টার আগে। ইদানীং রমজান মাসে মানুষ গভীর রাতে সেহরি করতে দলবেঁধে রেস্টুরেন্টে যায়- আমার ভালো লাগে সেটা। অনেকদিন ধরে ইচ্ছা ছিলো সেহরিতে বের হওয়ার। বছর ঘুরে সেহরি 'সুহুর' হয়ে গেল। তাও আমার যাওয়া হচ্ছিল না। অনেককে বলেছি সঙ্গে যেতে, আমার সঙ্গে 'রাতের রানী' হতে। কারো হয়ত আগ্রহ হয়নি, কারো হয়ত সুযোগ হয়নি কিংবা সময় মেলেনি। বিশেষ করে যেহেতু 'ভালো মেয়ে'রা রাতে ঘরের বাইরে বের হয় না, সেহেতু রাত বারোটার পর বের হওয়া অনেকের জন্য কঠিন। আমার সেই দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরালো পরশু রাতে। বন্ধুদের একটা উদযাপন ছিলো। আমি রাতে থেকে গেলাম আড্ডা দিতে।
জ্যাম এড়িয়ে টিএসসিতে চলে এলাম৷ বাইক পার্ক করে চা খুঁজতে লাগলাম। এক চাওয়ালা মামা নিজে এগিয়ে এলেন। স্মিতার সাথে ওয়ালেট নেই। আর আমার ওয়ালেটে টাকা নেই। ওয়ালেট খুলে দেখি দশ টাকার কটা নোট। এক কাপ র চা দশ টাকা। দু কাপ নিলাম। সাত কি আট বছর বয়েসি একটা মেয়ে অনেকগুলো বেলি ফুলের মালা নিয়ে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলাম দাম কত। বললো বিশ টাকা। জিজ্ঞেস করলাম দশ টাকায় দেবে কি না। কারণ টাকা নেই সাথে। সে তার সমবয়েসি এক ছেলের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলো এত কমে মালা বেচবে না।
জন্মদিনে একটা মানুষের এইটুকু শখ পূরণ হবে না এটা তো হতে পারে না। তাই একটা মালা নিয়েই নিলাম। ততক্ষণে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা একটা কাঠবাদাম গাছের নিচে ঠাঁই নিলাম। সেখানে আরো কিছু ছেলে জটলা পাকিয়ে বসা। সামনে অনেকগুলো হেলমেট জড়ো করা। বুঝলাম তারাও বাইকার। তারা আমাদেরকে বসার জায়গা করে দিলো। বললো যে এই বৃষ্টি বেশিক্ষণ থাকবে না। টিএসসি মোটামুটি সরব তখনো। নারী পুরুষ সবাই আছে। ঘুরছে, আড্ডা দিচ্ছে, চা খাচ্ছে। একটা আনন্দময় পরিবেশ।
মিনিট পাঁচেক পরে বৃষ্টি ধরে এলো। আমরা ঘুরেফিরে আবার ক্যাম্পাসে চলে এলাম।
ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সুমাইয়া আপু বললো, "এখনই যাবা? পাখির ডাক শুনে যাও!" বললাম যে মানিকমিয়া এভিনিউতে নতুন সূর্য দেখতে চাই। বের হতে হতে পাখিরাও ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে অবশ্য।