Saturday, September 7, 2024

বাংলাদেশে যৌনপেশার প্রশ্নোত্তর


গত বৃহস্পতিবার (২৯ অগাস্ট ২০২৪) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে যেখানে দেখা যায় একজন যুবক ঢাকার শ্যামলী এলাকার রাজপথে সবুজ রঙের একটি রড হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং ভাসমান যৌনকর্মীদের লাঠিপেটা করছেন। ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি যখন যৌনকর্মী নারীদের তাড়া করছিলেন তখন ক্যামেরা তাকে অনুসরণ করছিলো। অর্থাৎ আক্রমণকারী যুবক সচেতনভাবে উদ্যোগ নিয়ে এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করার প্রস্তুতি নিয়েই পথে নেমেছিলেন। শুধু লাঠিপেটা করে তিনি ক্ষান্ত হননি। এই ভাসমান যৌনকর্মীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন তিনি। আক্রমণশেষে তিনি উপস্থিত জনতাকেও আহ্বান জানান যৌনকর্মীদের একইভাবে বিতাড়িত করতে। উপস্থিত পথচারীদের একটি অংশ তালি দিয়ে এই যুবককে সাধুবাদ জানান। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ এবং আতংকিত যৌনকর্মীরা সেক্স ওয়ার্কারস নেটওয়ার্কের আয়োজনে প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হন ঘটনার এক সপ্তাহ পরে। সেখানে আমি সংহতি প্রকাশ করতে উপস্থিত হয়েছিলাম। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে এবং সংবাদ সম্মেলনের পর একজন নারীবাদী সংগঠক হিসেবে কিছু সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি। আমি মনে করি প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলোর মধ্য দিয়ে যৌনপেশার প্রতি জনমানসের দ্বিধাবিভক্ত অনুভূতি প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের যৌনকর্মী এবং অধিকারকর্মীরা যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেবার জন্য এবং মানুষ হিসেবে যৌনকর্মীর মৌলিক মর্যাদা অর্জনের জন্য যে দীর্ঘ লড়াইয়ে নাম লিখিয়েছেন তার যৌক্তিকতা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয় যৌনপেশাকে কেন্দ্র করে মানুষের দ্বিধা, অস্বস্তি এমনকি ঘৃণা থেকে উৎসারিত এই প্রশ্নগুলো দিয়ে। তাই প্রশ্নের উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়াটা আমি জরুরি মনে করি। আমার প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্ন এবং তার উত্তরগুলো আমি এখানে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।



প্রশ্ন ১: আজকে এখানে যৌনকর্মীরা কী চাইতে এসেছেন? 


উত্তর: আপনাদেরকে নিশ্চয়ই প্রেস ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে। সেখানে যৌনকর্মীদের দশটি দাবি স্পষ্টভাবে লেখা আছে। আমার অনুরোধ থাকবে যেকোনো দাবি নিয়ে বিশ্লেষণ বা মত প্রকাশের আগে একজন যৌনকর্মীকে আপনার সমমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে দেখুন। তাহলে আশা করি বুঝতে পারবেন কেন তাদেরও নিরাপত্তা ও সম্মানের অধিকার রয়েছে।


প্রশ্ন ২: আপনি এই সংবাদ সম্মেলনে কেন এসেছেন?


উত্তর: একজন নারী হিসেবে, একজন নারীবাদী সংগঠক হিসেবে আমি সংহতি প্রকাশ করতে এসেছি। কারণ আজ যৌনকর্মী বলে রাস্তায় ধরে ধরে পেটাচ্ছে কেউ, কাল পেটাবে ওড়না নেই বলে, হিজাব নেই বলে, কিংবা অন্য কোনো কারণে। পেশা, পরিচয়, পছন্দ নির্বিশেষে মানুষ হিসেবে, নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক নারীর জন্য নিরাপত্তা এবং মর্যাদার দাবি নিয়ে আমি এই সংবাদ সম্মেলনে এসেছি।


প্রশ্ন ৩: যৌনকর্মীরা কেন গার্মেন্টসের চাকরি করার কথা ভাবছেন না? কিংবা অন্য কোনো পেশায় কেন যাচ্ছেন না?


উত্তর: একজন যৌনকর্মী অন্য পেশায় যাবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত তার। বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় এটুকু বলতে পারি যে যৌনপেশা থেকে অন্য পেশায় যাওয়া সহজ নয়। সামাজিক, আর্থিক এবং শিক্ষাগত অবস্থান থেকে অধিকাংশ যৌনকর্মী অতিশয় প্রান্তিক মানুষ। প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে কোনো যৌনকর্মী যদি বিকল্প পেশায় নিযুক্ত হনও তার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার সুযোগ কম। তবে মূল কথা হলো বিকল্প পেশা খুঁজতে আজকে যৌনকর্মীরা এখানে আসেননি। আপনাদের প্রশ্ন আপনাদের মানসিক সংস্কার থেকে আসছে। আমি মনে করি আপনাদের উচিত নিজেদের মানসিক সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে পেশাদার প্রশ্ন করা।  


প্রশ্ন ৪: মুসলিম সংখ্যাগরিষ্টের এই দেশে একজন নারীর কি যৌনকর্মী হওয়া উচিত?


উত্তর: আমি অনুরোধ করব ধর্মকে এই আলোচনার বাইরে রাখতে। আমি বিশ্বাস করি ধর্ম যার যার, অধিকার সবার। কে কীভাবে ধর্ম পালন করবেন সেটা তার ব্যাপার। আপনারা যৌনকর্মী আপাদেরকে জিজ্ঞেস করলে জানবেন উনারা নিজেদের মতো করে ধর্ম পালন করেন। আমি মনে করি তাদের জীবিকার ঔচিত্য তাদের স্রষ্টা এবং নিজেদের মধ্যকার বোঝাপড়ার ব্যাপার। মানুষের যেমন আইন নিজের হাতে তুলে নেবার অধিকার নেই, তেমনি ধর্ম কিংবা অন্য কোনো নৈতিক মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করার অধিকারও আমাদের নেই। 


প্রশ্ন ৫: রাস্তায় একজন ভাসমান যৌনকর্মীকে দেখলে আপনার কেমন লাগে? আপনার কি মনে হয় না এতে পরিবেশ নষ্ট হয়?


উত্তর: রাস্তায় কে যৌনকর্মী আমি সেটা দেখে বুঝতে পারি না। রাস্তায় অনেক রকমের মানুষ থাকেন। কে যৌনকর্মী, কে ভিখারি, কে ফেরিওয়ালা, কে চা বিক্রেতা, কে অফিসগামী সেটা আমি আলাদা করে খেয়াল করি না। সবাইকেই মানুষ হিসেবে দেখি। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারেন বলে আমি মনে করি না।


প্রশ্ন ৬: আপনি কি মনে করেন ভাসমান যৌনকর্মী থাকা উচিত? নাকি কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের কাজ করা উচিত?


উত্তর: আমি মনে করি নির্ধারিত জায়গায় যৌনপেশা পরিচালনা করাটা সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ও নিরাপদ। এবং এর জন্যই যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট অধিকার ও দায়দায়িত্ব নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই নির্ধারিত নিরাপদ জায়গা না থাকলে, পেশাগত স্বীকৃতি ও বাধ্যবাধকতা না থাকলে, ব্রথেল উচ্ছেদ করে দিলে যৌনকর্মীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে এবং তারা ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে আরো বিপন্ন হয়ে পড়েন। 


প্রশ্ন ৭: আজকে যৌনকর্মীরা বললেন যে তারা যৌনকর্মের মাধ্যমে সমাজকে রক্ষা করছেন, এ ব্যাপারে আপনার মত কী? আপনি কি মনে করেন যৌনকর্মীরা না থাকলে সমাজে ধর্ষণ বেড়ে যেত? 


উত্তর: এই বক্তব্যের সপক্ষে আমার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই। বাংলাদেশের যৌনকর্ম নিয়ে অনেক গবেষণা এবং বই রয়েছে। আপনারা সেগুলো পড়ে দেখতে পারেন এবং যৌনকর্মীদের সাথে সরাসরি আলাপ করে দেখতে পারেন। তবে আমি আমার অনুমান থেকে বলতে পারি যে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের যে অনিয়ন্ত্রিত যৌন আকাঙ্ক্ষা তার প্রধান চাপ আমাদের যৌনকর্মীরা বহন করেন। আমাদের সমাজে নারীদেরকে যৌন অবদমন শেখানো হয়। নারীদের উপর স্থান ও সময়ের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পুরুষের জন্য এসব বিধিনিষের নেই। আমাদের সেই অর্থে কোনো যৌনশিক্ষাও দেওয়া হয় না। ফলে পুরুষের অবাধ এবং অনিরাপদ যৌনাচারের যথেষ্ট সুযোগ এখানে রয়েছে, যার ভুক্তভোগী আমাদের যৌনকর্মীরা হয়ে থাকেন। তারা তাদের সেই যাতনার অভিজ্ঞতা থেকে, ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে যেই বক্তব্য তুলে ধরেন তার ব্যাখ্যা তাদের কাছ থেকেই শোনা সমীচীন মনে করি আমি।   



প্রশ্ন ৮: অনেকে বলেন যে অনেকসময় যৌনকর্মীরা নাকি বেশি টাকা আদায়ের জন্য মারধোর করেন, গালিগালাজ করেন, মোবাইল, টাকা ইত্যাদি ছিনিয়ে রাখেন, এ ব্যাপারে আপনার মত কী? 


উত্তর: এ ব্যাপারে আমার কোনো অভিজ্ঞতা বা মতামত নেই। তবে আমি মনে করি এটি একটি গুরুতর অভিযোগ যা এই সংবাদ সম্মেলনে তুলে এনে মূল আলাপ থেকে সরে যাওয়া উচিত নয়।



প্রশ্ন ৯: আপনি কেন যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে কথা বলছেন? এমন একটা পেশা কি থাকা উচিত? 


উত্তর: প্রশ্নটা ঔচিত্যের না। মানব ইতিহাসের শুরু থেকে যৌনপেশা ছিলো, আছে, থাকবে। আড়াল করে, অবদমিত করে এই পেশাকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। যা থাকবে তাকে ভালোভাবে রাখাই যুক্তিযুক্ত। তাই আমি যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেবার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার ও পেশাগত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পক্ষে। বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা যখন সহিংসতার শিকার হন তখন পুলিশি সহায়তা চাইতে পারেন না। অনেকসময় চিকিৎসকরাও তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানান। যৌনকর্মীদের সন্তানদের অনেকসময় স্কুলে নিতে চায় না। অথচ যেসব পুরুষ এই যৌনকর্মীদের কাছ থেকে সেবা নেন তাদেরকে কেউ প্রশ্ন করেন না, সেবাগ্রহীরা পুরুষদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান না। আশা করি যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে যৌনকর্মীরা মানবিক সেবালাভের অবকাশ পাবেন, যৌনকর্মীদের সন্তানেরা সম্মানজনক জীবন পাবেন, যৌনকর্মীদের সেবাগ্রহীতাদের দায়বদ্ধতা বাড়বে, এবং বাংলাদেশে সার্বিক যৌনস্বাস্থ্যের পরিবেশ আরো নিরাপদ হবে।


প্রশ্ন ১০: আপনি কি যৌনপেশাকে প্রমোট করছেন?


উত্তর: আমি ব্যক্তির চয়েজকে প্রমোট করছি। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে নিজের ইচ্ছায় পেশা নির্বাচনের, নিজের ইচ্ছায় জীবনযাপনের। কেউ যদি যৌনকর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে চান আমি তার ইচ্ছাকে সম্মান করার পক্ষে। সেই সঙ্গে তার নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে তার পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হলে আমি দাঁড়াব। তার পেশা আমার মাথাব্যথা নয়। 


প্রশ্ন ১১: আপনার পরিবারের কোনো পুরুষ যদি যৌনকর্মীর কাছ থেকে সেবা নেন, আপনি তাকে কী বলবেন?


উত্তর: এটি একটি হাইপোথেটিক্যাল প্রশ্ন। আমি হাইপোথেটিক্যালিই বলছি। আমার পরিবারের কোনো পুরুষ বা আমার কোনো পুরুষ বন্ধু যদি যৌনকর্মীর কাছ থেকে সেবা নেন, আমি তাকে বলব সবার আগে যৌনকর্মী নারীটিকে যেন তিনি মানুষ হিসেবে নিজের সমান মর্যাদা দেন। দ্বিতীয়ত, যৌনকর্মীর সঙ্গে কিংবা অন্য যেকারো সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য অন্যপক্ষের সম্মতি তথা কনসেন্ট যেন নিশ্চিত করেন তিনি। তৃতীয়ত, আমি তাকে বলব সেফ সেক্সের কথা। একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হলে যৌনবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই যথাযথ প্রোটেকশন এবং পরীক্ষানিরীক্ষার ব্যাপারে আমি আমার পরিচিত পুরুষকে সচেতন থাকতে বলব। 



প্রশ্ন ১২: যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম কী শিখবে?


উত্তর: যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে সেখানে কিছু পেশাগত বাধ্যবাধকতা থাকবে। ফলে যৌন অধিকার ও দায়িত্বশীল যৌন আচরণ নিয়ে কথা বলার, এবং শেখার পরিসর বাড়বে। তাই আশা করি যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যৌন সম্মতি ও নিরাপদ যৌনতা সম্পর্কে শিখবে। সর্বোপরি তারা মানুষকে তার যৌনাঙ্গের ব্যবহার দিয়ে বিচার না করে তার চিন্তা ও কর্ম দিয়ে সম্মান করতে শিখবে।



প্রশ্ন ১৩: নারীর প্রতি যেই নির্যাতন হয় তা দূর করতে বাংলাদেশে কী করা উচিত? নারীশিক্ষা বাড়ালে কি নির্যাতন কমবে বলে আপনার মনে হয়?


উত্তর: নারী শিক্ষা কিন্তু অনেক বেড়েছে আমাদের। আমাদের নারী নির্যাতনবিরোধী আইনও বেশ শক্ত। এই আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার। নারী শিক্ষার পাশাপাশি দরকার পুরুষের শিক্ষা বাড়ানো এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনা। আমাদের নারীশিক্ষা যেমন বাড়ছে, ধর্ষণ আর যৌন হয়রানিও তো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। নারীবিদ্বেষী অপরাধগুলো মূলত পুরুষই করছে। কারণ পুরুষ শিক্ষিত, সাহসী নারীকে গ্রহন করতে পারছে না। নারীর প্রত্যাখ্যান, নারীর নেতৃত্ব পুরুষ মেনে নিতে পারছে না। তাই আমি মনে করি নারীর প্রতি নির্যাতন দূর করতে এখন পুরুষকে সচেতন করা, পুরুষের দায়বদ্ধতা বাড়ানো জরুরি।


আমি নেহাতই একজন সংগঠক। আমাকেই যখন যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এতসব প্রশ্ন এবং নৈতিক বিচারের মুখে পড়তে হয়েছে, সেখানে একজন যৌনকর্মী কত প্রশ্ন এবং আক্রমণের মুখে পড়েন তা অনুমেয়। যৌনকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি যে শ্যামলীতে আক্রান্ত একজন নারী গর্ভবতী ছিলেন এবং একজন যৌনকর্মীর সন্তান এ ঘটনায় আতংকগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেছেন। যৌনকর্মীদের উপর এহেন আক্রমণ এবং তার ফলে যৌনকর্মীদের পরবর্তী বিপন্নতায় জনমানসে আমি যতহানি সহানুভূতি সৃষ্টি হতে দেখেছি তারচেয়ে বেশি দেখেছি করুণা এবং তিরস্কার। মাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবিধ আলোচনা ও মন্তব্য দেখে আমার মনে হয়েছে একজন যৌনকর্মীর সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করা বাংলাদেশের রক্ষণশীল, মধ্যবিত্ত জনপদের জন্য বেশ কঠিন। সংবাদ সম্মেলনে আগত সাংবাদিকদের অনেকেই ভুলে গেছিলেন যে কারো করুণা চাইতে কিংবা পুনর্বাসনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যৌনকর্মীরা সংবাদসম্মেলনের আয়োজন করেননি। তারা সাংবাদিকদের ডেকেছিলেন তাদের নিরাপত্তার আরজি সরকারের কাছে পৌঁছানোর জন্য। এক ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনের সিংহভাগ জুড়ে যৌনকর্মের যৌক্তিকতা, বিকল্প পেশার সম্ভাবনা, এবং যৌনকর্মীদের অপরাধপ্রবণতার সম্ভাবনা নিয়ে নানান ধরনের মোরাল পুলিসিংয়ের জবার দিতে হয়েছে উপস্থিত অধিকার কর্মীদেরকে। এই প্রশ্ন, এই নৈতিক বিচার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যে দেশে যৌনতা তথা সেক্স শব্দটি প্রকাশ্যে উচ্চারণ করতেই মানুষ সংকুচিত হয়ে যায়, যে দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় যৌনশিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয়, যে দেশে ধর্ষণের শিকার নারীকে প্রথমে তার চরিত্র ও পোশাক দিয়ে ব্যবচ্ছেদ করা হয়, যে দেশে নারীর যোনীর ব্যবহার দিয়েই তার চরিত্র নির্ধারিত হয়, সে দেশের তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলাদের মর্যাদার ভিত টলে যায় যৌনপেশার প্রশ্নে। একটি পেশাগত সম্মেলনে অপরিণত, অপেশাদার প্রশ্ন উত্থাপনের প্রবণতাকে আমি সেই মানসিক ধাক্কার প্রাথমিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখি। আশা করি এই প্রশ্নগুলো নিয়ে তারা আরো ভাববেন এবং আসন্ন আলোচনার বিভিন্ন পরিসরে ধীরে ধীরে সুচিন্তিত ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের মাধ্যমে মানবিক সমাধানে পৌঁছাতে আমাদেরকে সহায়তা করবেন। আপনাদের কারো মনে আর কোনো প্রশ্ন থাকলে মন্তব্যে লিখে দিতে পারেন। সেগুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করব।

তৃষিয়া নাশতারান

প্রেসিডেন্ট, অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

Sunday, August 25, 2024

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে একজন প্রত্যাখ্যাত অতিথির প্রশ্ন

গতকাল রাতে আমি জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বার্তা শুনেছি। আরো অনেকের মতো বার্তাটি আমার ভালো লেগেছে এবং সময়োপযোগী মনে হয়েছে। ড. ইউনূস কোনোরকম নাটকীয়তা এবং বাহুল্য ছাড়া ঝরঝরে ভাষায় একটি নতুন বাংলাদেশের কথা বলেছেন যেখানে আমরা সহযোদ্ধা, এক পরিবার, সবাই সমান, যেখানে কোনো ভেদাভেদ আমাদের স্বপ্নকে ব্যাহত করতে পারবে না। এই কথাগুলো শুনে আমি পাঁচ দিন আগে খসরা করে রাখা আমার লেখাটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যা বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য যৎসামান্য ত্রাণ সমন্বয়ের ব্যস্ততার কারণে স্থগিত রেখেছিলাম। লেখাটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং আবেগ থেকে উৎসারিত হলেও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জন্য এখান থেকে উঠে আসা প্রশ্নগুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে করি আমি। এমনকিছু আমি বলার প্রয়োজন বোধ করছি যা ড. ইউনূস তার বার্তায় বলেননি, এবং খুব সম্ভবত জানেনও না। ড. ইউনূসের পাশাপাশি আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চারজন নারী উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যারা ২০ অগাস্ট ২০২৪ (মঙ্গলবার) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এই বৈঠককে কেন্দ্র করে পাওয়া অস্বচ্ছ এবং অসৌজন্য আচরণের জবাব খুঁজছি আমি। আমার লেখার ভাষায় ক্রোধ প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু আপনাদেরকে অসম্মান করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি মনে করি জবাব পাওয়া আমার অধিকার। গত রাতে ড. ইউনূসের বক্তব্য শুনে আমার আস্থা জন্মেছে যে এই জবাব এখন চাওয়া যেতে পারে।


২০ অগাস্টের ওই বৈঠকে আমার থাকবার কথা ছিলো। অন্তত আমি তা-ই জানতাম। আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে অতিথিদের তালিকায় নাকি আমার নাম ছিলো না। তথ্য এবং যোগাযোগের অনুপস্থিতিতে আমি সেখানে হয়রানির শিকার হয়েছি। এই হয়রানির জের ধরে অনুভূত অসম্মানের রেশ বহুদিন থাকবে বলে ধারণা করছি। আমার অভিজ্ঞতার যথাযথ ব্যাখ্যা এবং মীমাংসা আমার প্রয়োজন।


খবরে জেনেছি বৈঠক শুরু হয়েছিল পৌনে বারোটায়। আমাকে আগেরদিন বলা হয়েছিল ২০ তারিখ সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপস্থিত হতে। হয়েছিলাম। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা যখন অতিথিদের তালিকায় আমার নাম খুঁজে পাচ্ছিলেন না, তাদেরকে আমার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম ভেতরে কথা বলতে। সেই কার্ড ভেতরে পৌঁছেছিল কি না আমি জানি না। সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করেছি। প্রথম এক ঘণ্টা তাদের সমন্বয়হীনতার সুরাহার আশায়। পরের দুই ঘণ্টা ক্রোধে। ডেকে নিয়ে করা এই অসম্মান মেনে নিয়ে ফিরে আসার কোনো কারণ আমার ছিলো না। একজন মানুষ তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করছে দেখেও কারো ভ্রূক্ষেপ দেখিনি। দেশ পুনর্গঠনে যেখানে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস, যেখানে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগিতার কথা আমরা বারবার বলছি, সেখানে কারিগরি বিভ্রাট কিংবা প্রটোকলের দোহাই দিয়ে মানুষ আলোচনার টেবিল থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে, এটা আমি মানতে নারাজ।


আমি কে?

আমার নাম তৃষিয়া নাশতারান। আমি একজন নারীবাদী সংগঠক ও ফোরসাইট স্ট্র‍্যাটেজিস্ট। আমি প্রযুক্তি এবং মানবাধিকারকে একত্রিত করার কৌশল ডিজাইন করি,  ভবিষ্যতকে ডিকলোনাইজ করার জন্য গবেষণা ও কাজের সমন্বয় করি। লিঙ্গবৈষম্য, ডিজিটাল অধিকার এবং ইনক্লুসিভ ভবিষ্যত আমার প্রধান মাথাব্যথা। বাংলাদেশে আমার পড়ালেখা বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যায়। স্নাতকোত্তর পড়ালেখা করেছি কানাডার অকাড ইউনিভার্সিটিতে স্ট্র্যাটেজিক ফোরসাইট অ্যান্ড ইনোভেশনে। সেখানে আমার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিলো বাংলাদেশের ডিজিটাল স্পেসে নারীবাদের ভবিষ্যত। গত ১৩ বছর ধরে আমি মেয়ে নেটওয়ার্ক নামে একটি নারীবাদী গ্রাসরুটস অরগানাইজিং প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করছি যা নারীদের গ্রাসরুটস সংগঠনা, দেশি উদ্যোগের প্রসার এবং সর্বস্তরের মানুষের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি ফেমিনিস্ট অ্যালায়েন্স অফ বাংলাদেশ (FAB) নামে একটি উন্মুক্ত বিউনিবেশবাদী, প্রগতিশীল নারীবাদী প্লাটফর্মের সমন্বয়ক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। কোনো ধরনের দাতা সংস্থা কিংবা রাজনৈতিক দলের সাথে আমার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের কোনো সংযোগ নেই। এ কারণে বেশিরভাগ জায়গায় আমি বিচ্ছিন্ন থাকি।


আমি কীভাবে উপদেষ্টাদের বৈঠকে আমন্ত্রিত হলাম?

গত ১৫-ই অগাস্ট (বৃহস্পতিবার) ঋতু সাত্তার আমাকে কল দেন। ঋতু সাত্তার একজন শিল্পী। উনার একটি পারফরমেন্সের সূত্রে আমাদের পরিচয়। ঋতু জানান যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নারী সংগঠকদের একটি সৌজন্য সাক্ষাত হবে। সেখানে তিনি আমার নাম মনোনয়ন করতে চান, জানতে চান আমি আগ্রহী কি না। আমি জানাই যে আমি আগ্রহী এবং আমার বেশ কিছু প্রস্তাবনার কথাও জানাই। আমি আমার নাম, পরিচয়, ফোন নাম্বার, ইমেইল আইডি ঋতু সাত্তারকে দিই। ধারণা করেছিলাম ঋতু সাত্তার কোনোভাবে উপদেষ্টাদের সঙ্গে কাজ করছেন, এবং সেই সূত্রে অতিথি তালিকা তৈরি করার এখতিয়ার উনার আছে। ব্যাপারটা যে আসলে তেমনকিছু নয় সেটা আমি বুঝতে পারি ১৯ তারিখ রাতে যখন ঋতু সাত্তার বলতে পারছিলেন না এই বৈঠকে আর কারা থাকবেন এবং আলোচনার বিষয়বস্তু কী হবে। উনার ভাষ্যমতে উনি ক্ষুব্ধ নারীসমাজ নামের জোটের মাধ্যমে ফরিদা আখতারের সঙ্গে যুক্ত। যেহেতু ঋতু সাত্তার আমার খোঁজ উনাকে দিয়েছেন, সেই সূত্রে ঋতু সাত্তারকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর বেশিকিছু উনি জানেন না। তবে সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় নিয়ে আমরা আলাপ করি। 


ফরিদা আখতার বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিমণ্ডলে পরিচিত মুখ। তবে উনাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। ক্ষুব্ধ নারীসমাজ সম্পর্কেও খুব একটা ধারণা আমার নেই। শুধু একবার তাদের একটি সমাবেশে গেছিলাম ফেসবুক পোস্ট দেখে। ফরিদা আখতার সেখানে ছিলেন কি না জানি না। এটা যে উনার উদ্যোগ আমি সেটাও জানতাম না। উনার কিংবা বৈঠকের আয়োজকদের আর কারো সাথে যোগাযোগের কোনো উপায় জানা না থাকায় আমি ঋতু সাত্তারের কথামতো বৈঠকের প্রস্তুতি নিই। বৈঠকের দিন, অর্থাৎ ২০ অগাস্ট সকাল সোয়া ১০টায় ঋতু সাত্তার আমাকে কল দেন আমি বাসা থেকে যমুনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি কি না নিশ্চিত হতে। আমি তখন পথে। এ পর্যন্ত আমি ঘুণাক্ষরে জানতাম না কীভাবে অতিথি তালিকা তৈরি হচ্ছে, কে তৈরি করছেন এবং কারা এই তালিকায় আছেন।


আমি যমুনার প্রধান ফটকে গিয়ে পৌঁছাই ১১টা বাজার চার মিনিট আগে। আমার নাম জানতে চাওয়া হয়। নাম শুনে উপস্থিত কর্মকর্তা বলেন যে আমার নাম ওই তালিকায় নেই। আমি তালিকা দেখতে চাই। কারণ আমার নামের বানান ভুল হওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তালিকায় দেখি আমার পরিচিত এবং প্রিয় অনেক নারী সংগঠক সেই তালিকায় রয়েছেন, আবার আমার থেকেও যোগ্য অনেকে সেখানে নেই।


আমি এবার ঋতু সাত্তারকে কল দিতে শুরু করি। তিনি ফোন ধরেন না। তালিকায় আমার পরিচিত যারা ছিলেন তাদের কল দিই। তারা কেউই ফোন ধরেন না। ধারণা করি হয় তাদের ফোন সাইলেন্ট কিংবা তাদের ফোন রেখে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরকে আমার ভিজিটিং কার্ড দিই। বলি ভেতরে কথা বলতে। কারণ ভাবছিলাম কোথাও কোনো ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। উনারা সবিনয়ে আমাকে গাড়িতে বসতে বলেন। ভেতর থেকে খোঁজ এলে তারা আমাকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো খোঁজ আসে না। 


বলাবাহুল্য আমার অপেক্ষা মোটেও সুখকর ছিলো না। আমি একজন আমন্ত্রিত অতিথি। যেচে পড়ে যাইনি যে তাদের দুয়ারে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হবে আমাকে। সেদিন সকাল ১০টা থেকে আমার সংগঠনের দেয়ালচিত্রের কাজ শুরু হয়েছে ঢাকার অন্য এক এলাকায়। আমি সেই কাজ ফেলে নিজেকে এবং নিজের ভাবনাগুলো গুছিয়ে এনে হাজির হয়েছিলাম সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য। সেখানে আমাকে দরজা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া, বসিয়ে রাখা এবং কোনো জবাবদিহিতার ধার না ধারা কোন ধরনের সৌজন্যমূলক আচরণ? আমরা তো রাজতন্ত্রের প্রজা নই যে সিংহদুয়ার থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নীরবে করজোড়ে ফিরে আসব। আমি জবাবের অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখানে।



ছবি: মেয়ে নেটওয়ার্কের দেয়ালচিত্র, সৌজন্যে: সাজান রানা

বৈঠকশেষে বেলা দুইটার দিকে ঋতু সাত্তার বের হন যমুনা থেকে। তার কিছুক্ষণ পরে বের হন বীথি ঘোষ, শ্যামলী শীল এবং তাসলিমা আখতার। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেন কেন আমি বৈঠকে ছিলাম না। অর্থাৎ ঋতু সাত্তার ছাড়াও আরো মানুষ জানতেন যে ওখানে আমার থাকার কথা ছিলো। উনাদের থেকে জানতে পারি যিনি অতিথিদের তালিকা তৈরি করেছেন তার নাম সীমা দাস সীমু। আমি উনাকে চিনি না। উনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কোন পদাধিকারে যুক্ত সেটাও আমি জানি না। ঋতু সাত্তার সীমা দাসকে কল দিয়ে জানতে চাইলেন কেন আমার নাম ছিলো না তালিকায়। সীমা দাস নাকি বলেছেন তালিকা কোনোভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে। উনার দেওয়া তালিকা আর উপদেষ্টার পাঠানো তালিকা কোনো একভাবে ভিন্ন হয়ে গেছে। তিনি নাকি আরো বলেছেন পরদিন, অর্থাৎ বুধবার সকালে ফরিদা আখতারের সাথে কথা বলে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হবে। প্রয়োজনে ফরিদা আখতারের সাথে ্নাকি আমাকে কথা বলিয়ে দেওয়া হবে। 


বুধবারে সকাল গড়িয়ে দুপুরে হলো। বেলা তিনটার দিকে সীমা দাস সীমু আমাকে কল দিলেন। তিনি মঙ্গলবার দুপুরে ঋতু সাত্তারকে যা বলেছিলেন সেগুলোই আমাকে বললেন এবং দুঃখপ্রকাশ করলেন। তিনি এ-ও বললেন যে তিনি জানেন না কীভাবে তালিকা এলোমেলো হয়ে গেছে। ফরিদা আখতারের সঙ্গে আলাপের ব্যাপারে উনি কিছু বললেন না। 


ফরিদা আখতারের সঙ্গে এখনো আমার আলাপ হয়নি। কেন উনার সঙ্গেই কথা বলতে হবে সেটাও আমি জানি না। তবে অতিথি তালিকায় ফরিদা আখতারের ভূমিকা আছে ধারণা করে ঘটনার দিনই বিকেল তিনটার দিকে ফরিদা আখতারকে ফেসবুকে একটি মেসেজ পাঠিয়েছিলাম আমি। কারণ উনার সাথে সরাসরি যোগাযোগের আর কোনো উপায় আমার জানা ছিলো না। আমার মেসেজ উনি দেখেননি এখনো। 


ঋতু সাত্তার বলেছেন ক্ষুব্ধ নারীসমাজের পরবর্তী ইভেন্টে আমি যেন যাই। ওখানে ফরিদা আখতারের সাথে কথা বলিয়ে দেবেন ঋতু সাত্তার। একজন উপদেষ্টার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য কেন আমাকে তার সংগঠনের ইভেন্টে যেতে হবে, কেন ঋতু সাত্তার আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। আলোচনার টেবিলে জায়গা পেতে কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় তৈরিতে আমি আগ্রহী নই।


এখন আমি জানতে চাই -


১। অতিথিদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ এবং অগোছালো কেন? কে বা কারা তালিকা তৈরি করছেন? সেই তালিকা কাটছাঁট করছেন কে বা কারা?


২। অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব কার এবং এর দাপ্তরিক পদ্ধতি কী? ঋতু সাত্তার কেন আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে উনার সম্পর্ক কী? 


৩। একটি রাষ্ট্রীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকা কি ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রে হতে পারে? কেন অতিথিরা কোনো দাপ্তরিক চিঠি বা ইমেইলের মাধ্যমে আমন্ত্রণ পেলেন না? (অন্যরাও চিঠি পাননি। সবাই কারো না কারো ফোনকলে গেছিলেন।)


৪। আমার নাম কেন বাদ পড়ল তালিকা থেকে? এটা কি ইচ্ছাকৃত? এখানে কি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন কেউ? এখানে স্বচ্ছতা কীভাবে নিশ্চিত করছেন আপনারা?


৫। যদি মনে হয়ে থাকে ওই বৈঠকের জন্য ঠিক মানুষ নই, সেটা আমাকে আগে থেকে কেন জানানো হয়নি এবং কেন দুঃখপ্রকাশ করা হয়নি? কেন ডেকে নিয়ে আমার সময় নষ্ট করা হলো? 


৬। আপনারা কীসের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন করছেন? কীভাবে আপনারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কারা বাংলাদেশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন? 


৭। অতিথি নির্বাচনে এত গোপনীয়তা কেন? কেন আপনারা উন্মুক্ত ডাক দেননি নারী সংগঠকদের? 


৮। ড. ইউনূসের বার্তা থেকে জেনেছি উপদেষ্টার পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন বিশেষ সহযোগীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যার দায়িত্ব হবে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন। তিনি কে?



ধরে নিই আমি নিতান্তই অজ্ঞ এবং অপাঙক্তেয় কেউ। তাও আমার সাথে যা ঘটেছে তা কারো সাথে করার অধিকার একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কারো নেই। বিশেষ করে যখন আপনারা একটি নতুন বাংলাদেশ, একটি সার্বজনীন ভবিষ্যতের কথা বলছেন, ক্ষমতাকাঠামোকে জনমুখী করার কথা বলছেন, তখন আলোচ্য বৈঠককে কেন্দ্র করে দৃশ্যমান অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতা আপনাদের কর্মপদ্ধতি নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন উদ্রেক করেছে। কারা প্রতিনিধি হবেন, কারা আলোচনায় থাকতে পারবেন সেই সিদ্ধান্ত কারা নিচ্ছেন? আপনাদের তৈরি করা তালিকা কি আড়ালে অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করেন? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আপনাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কতটুকু?



ঘটনার পরদিন সীমা দাস সীমু ফোনে স্নেহের সুরে আমাকে বলেছিলেন, “আমরাও তো চাই ছোট মানুষরা আসুক, নতুনদের কণ্ঠ উঠে আসুক।”

আমি উনাকে সবিনয়ে বলেছি, “দিদি, আমি কখনো দেখিনি আপনাকে। আপনি সম্ভবত আমার থেকে বয়সে বড়। কিন্তু আমি ছোট মানুষ না। আমি প্রাপ্তবয়স্ক এবং দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা আছে আমার। সেই জায়গা থেকেই আমি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে চেয়েছি।”


আমি উনাকে যা বলেছি, আপনাদেরও তা-ই বলব – সমস্যাটা ব্যক্তিগত নয় এবং আপনাদের প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরাগ নেই। তাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনোরকম আলাপ বা দুঃখপ্রকাশে এই সমস্যার সুরাহা হবার নয়।  আমি সীমা দাস সীমুকে বলেছি উনি যেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এটা করার এখতিয়ার উনার আছে কি না, উনি এ ব্যাপারে আপনাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না আমি জানি না। এখন পর্যন্ত কোনো উপদেষ্টার তরফ থেকে কোনোরকম অফিশিয়াল ব্যাখ্যা বা যোগাযোগ আমি পাইনি।


খবর পড়ে জেনেছি বৈষম্য নিরসনে নারী অধিকার কমিশন গঠনের দাবি উঠেছে বৈঠকে। আমি জানি না আপনারা কীভাবে কমিশন গঠন করবেন এবং সেই কমিশন কাদের নিয়ে কাজ করবে। সেই কমিশনে আমার মতোদের কতখানি প্রবেশাধিকার থাকবে তা জানতে উৎসুক আমি। বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিমণ্ডলে পা রাখার পর থেকে বহুবার বহু মুখে আমি শুনেছি পুরনোরা কতটা চান নতুনরা এগিয়ে আসুক। তারপর দেখেছি এই পুরনোদেরই কতজন পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকেন। সমস্যাটা উন্নয়নক্ষেত্রের নয়। সমস্যাটা বাংলাদেশের নেতৃত্বের সংস্কৃতির। ক্ষমতা কেউই ছাড়তে চান না। মাত্র একজন স্বৈরশাসকের পতন হলো। অন্ততপক্ষে অন্তর্বর্তীকালে একটি উন্মুক্ত জায়গা আমাদের প্রাপ্য ছিলো। এই উন্মুক্ত জায়গাটুকুর জন্য আমরা অনেকে অনেক বছর ধরে লড়ে যাচ্ছি। আরেকবার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন আপনারা। 


একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই যদি সমতা আর স্বচ্ছতা বজায় রাখতে না পারে, তাহলে আগামীর দলীয় রাজনীতির কী অবস্থা দাঁড়াবে, ভাবুন। বয়স, শ্রেণি, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক পরিচিতি দিয়ে তৈরি করা হায়ারার্কি আর কত? আমি তাও যথেষ্ট সুবিধাপ্রাপ্ত একজন মানুষ। আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারি, কেউ জায়গা না দিলে নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে পারি। যে মানুষটি আরো প্রান্তিক, যে মানুষের প্রবেশগম্যতা সীমিত, যে মানুষটির কণ্ঠ রুদ্ধ সে কীভাবে আপনাদের সাথে যুক্ত হবে? আপনি, আপনারা, আমি, আমরা সবাই তো একই পক্ষের মানুষ। এই পক্ষে সবার ক্ষমতা সমান তো? আমি একটি ডিকলোনাইজড, ইনক্লুসিভ ভবিষ্যত চাই। আমি চাই সবার জন্য স্বাধীন বিচরণ এবং মতপ্রকাশের সহজ, স্বচ্ছ পথ তৈরি হোক। আসুন, শুরুটা হোক একজন দলছুট, ক্ষমতাহীন মানুষের ক্রোধের জবাব দেওয়ার মধ্য দিয়ে। 


ড. ইউনূস সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। আমি ধৈর্য ধরে আপনাদের জবাবের অপেক্ষায় রইলাম।


তৃষিয়া নাশতারান

২৬ অগাস্ট ২০২৪

যোগাযোগ: nashtaran@gmail.com


Sunday, May 1, 2022

এই রাত তোমার আমার

আমার মনে হয় একটা শহরের সৌন্দর্য তার নাইট লাইফে। আমার চোখে ঢাকা সবচেয়ে সুন্দর রাত ১২টার পরে, ভোর ৬টার আগে। ইদানীং রমজান মাসে মানুষ গভীর রাতে সেহরি করতে দলবেঁধে রেস্টুরেন্টে যায়- আমার ভালো লাগে সেটা। অনেকদিন ধরে ইচ্ছা ছিলো সেহরিতে বের হওয়ার। বছর ঘুরে সেহরি 'সুহুর' হয়ে গেল। তাও আমার যাওয়া হচ্ছিল না। অনেককে বলেছি সঙ্গে যেতে, আমার সঙ্গে 'রাতের রানী' হতে। কারো হয়ত আগ্রহ হয়নি, কারো হয়ত সুযোগ হয়নি কিংবা সময় মেলেনি। বিশেষ করে যেহেতু 'ভালো মেয়ে'রা রাতে ঘরের বাইরে বের হয় না, সেহেতু রাত বারোটার পর বের হওয়া অনেকের জন্য কঠিন। আমার সেই দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরালো পরশু রাতে। বন্ধুদের একটা উদযাপন ছিলো। আমি রাতে থেকে গেলাম আড্ডা দিতে।


ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছিল। পুকুরপাড়ে বসেছিলাম কজন।


হু হু বাতাসে উড়ে যেতে যেতে মনে হলো এমন সুন্দর রাতে নগরভ্রমণ করা উচিত। ছেলেদের হল। গেট সারারাতই খোলা থাকে। স্মিতাকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। স্মিতার সেদিন জন্মদিন। তাই ওর ইচ্ছাতেই ঘোরা হলো। প্রথমে গেলাম বুয়েটে। বুয়েটের গেট বন্ধ। তারপর গেলাম পলাশীতে চা খেতে। পলাশীও বন্ধ। তারপর গেলাম বুয়েটের ছাত্রীহলে। এই হল আমাদেরকে রাত দশটার পরে ঢুকতে দিত না। রাত দুইটায় এসে দর্শন দিয়ে যাওয়াটা তাই জরুরি মনে হলো।


সেখান থেকে নীলক্ষেত। দোকানপাট সব খোলা। এমনকি বালিশ তোশকের দোকানও। এত রাতে কে বালিশ কিনতে আসে কে জানে? নীলক্ষেতের মোড়ে ট্রাফিক দেখে কে বলবে তখন রাত দুইটা?

জ্যাম এড়িয়ে টিএসসিতে চলে এলাম৷ বাইক পার্ক করে চা খুঁজতে লাগলাম। এক চাওয়ালা মামা নিজে এগিয়ে এলেন। স্মিতার সাথে ওয়ালেট নেই। আর আমার ওয়ালেটে টাকা নেই। ওয়ালেট খুলে দেখি দশ টাকার কটা নোট। এক কাপ র চা দশ টাকা। দু কাপ নিলাম। সাত কি আট বছর বয়েসি একটা মেয়ে অনেকগুলো বেলি ফুলের মালা নিয়ে এগিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করলাম দাম কত। বললো বিশ টাকা। জিজ্ঞেস করলাম দশ টাকায় দেবে কি না। কারণ টাকা নেই সাথে। সে তার সমবয়েসি এক ছেলের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলো এত কমে মালা বেচবে না।

আমরা ফুটপাথে উঠে চা খেতে লাগলাম। মালা হাতে মেয়েটা ঘুরে বেড়াচ্ছে তখনো। আমাদেরকে সাবধানে এড়িয়েও যাচ্ছে। স্মিতা বললো মালাগুলো একদম তরতাজা, টাকা থাকলে কিনত।

জন্মদিনে একটা মানুষের এইটুকু শখ পূরণ হবে না এটা তো হতে পারে না। তাই একটা মালা নিয়েই নিলাম। ততক্ষণে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা একটা কাঠবাদাম গাছের নিচে ঠাঁই নিলাম। সেখানে আরো কিছু ছেলে জটলা পাকিয়ে বসা। সামনে অনেকগুলো হেলমেট জড়ো করা। বুঝলাম তারাও বাইকার। তারা আমাদেরকে বসার জায়গা করে দিলো। বললো যে এই বৃষ্টি বেশিক্ষণ থাকবে না। টিএসসি মোটামুটি সরব তখনো। নারী পুরুষ সবাই আছে। ঘুরছে, আড্ডা দিচ্ছে, চা খাচ্ছে। একটা আনন্দময় পরিবেশ।

মিনিট পাঁচেক পরে বৃষ্টি ধরে এলো। আমরা ঘুরেফিরে আবার ক্যাম্পাসে চলে এলাম।



ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সুমাইয়া আপু বললো, "এখনই যাবা? পাখির ডাক শুনে যাও!" বললাম যে মানিকমিয়া এভিনিউতে নতুন সূর্য দেখতে চাই। বের হতে হতে পাখিরাও ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে অবশ্য।



মানিকমিয়া এভিনিউতে এসে ঠিক ঠিক সূর্যোদয় পেয়ে গেলাম।


সঙ্গে পেলাম একরাশ সোনালু ফুল। 



একাগ্রচিত্তে দাঁড়িয়ে ফুল দেখছিলাম। এমন সময় গেরুয়া বসনে এক বুড়ো লোক আমার পাশে দাঁড়ালেন। বললেন কিছু টাকা দিতে। আমি জানি আমার ওয়ালেট তখন গড়ের মাঠ। তাই ক্ষমা চেয়ে নিলাম। উনি চলে গেলেন। কী মনে করে ওয়ালেট খুললাম আবার। দেখি পনেরো টাকা আছে। বুড়োকে ডাক দিলাম পেছন থেকে। যা ছিলো তা-ই দিলাম। উনি হেসে বললেন, "তোমার ভালো হোক।"
উনার ফিরে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আছি, এমন সময় হাওয়ার দোলায় মাথার উপর থেকে সোনালু ঝরে পড়তে লাগল। 

জীবনের সৌন্দর্যে অভিভূত হৃদয় আর শূন্য পকেটে ঘরে ফিরেছি কাল। রাতটা ছিলো এক পরম উপহার।





Friday, October 16, 2020

বাংলাদেশের শাড়ি

আমি শাড়ি পরতে ভালোবাসি। এককালে ঝোঁকের বশে প্রচুর শাড়ি কিনেছি। মিনিমালিস্ট হওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ঝোঁক কমিয়েছি। তার মানে এই না যে আমি শাড়ি কিনবো না। মিনিমালিজম কনসেপ্টটা অনেকে ভুল বোঝেন। তারা মনে করেন মিনিমালিজম মানে কৃচ্ছতা। আমার কাছে মিনিমালিজম মানে পরিমিতি। কনজিউমারিজমের পাগলা ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে বুঝেশুনে পা ফেলা, অপচয় কমানো হচ্ছে মিনিমালিজম। ফাস্ট ফ্যাশনের এই যুগে আমি স্লো ফ্যাশনে যেতে আগ্রহী। তাই যা-ই কিনি ভেবেচিন্তে কিনি, আমার ও অন্যের জীবনে এবং প্রকৃতিতে তার প্রভাব কী তা ভাবি। সে হিসেবে একজন বাঙালির আলমারিতে বাংলাদেশের কোন কোন শাড়ি অন্তত একটা থাকলে ক্ষতি নেই এমন শাড়ির তালিকা বানাচ্ছি। কিছু বাদ পড়ে থাকলে মন্তব্যের ঘরে যোগ করে দেবেন দয়া করে।

  1. জামদানি
  2. মণিপুরি
  3. নকশি কাঁথা
  4. এন্ডি সিল্ক
  5. এন্ডি কটন
  6. কোটা
  7. কটকি
  8. তাঁতের সুতি
  9. খেস
  10. টাইডাই
  11. মোমবাটিক
  12. ভেজিটেবল ডাই
  13. যশোর স্টিচ
  14. ব্লক
  15. গামছা
  16. বিপ্লাস
  17. জুম
  18. হ্যান্ডপেইন্ট
  19. সিল্ক মসলিন
  20. প্রিন্টেড পিওর সিল্ক
  21. কাতান

Monday, December 30, 2019

Frequently Misused Words

গত তিন বছরে আমার শোনা কিছু শব্দ যেগুলোকে আমি নিয়মিত ভুলভাবে প্রয়োগ হতে দেখেছি সেগুলা লিখব। এই শব্দগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ এবং তাৎপর্য আছে। আপনি যখন না বুঝে এই শব্দগুলো ব্যবহার করবেন তখন এই শব্দগুলোর সাথে জড়িত ব্যক্তি এবং কাজগুলোর প্রতি অন্যায় করা হয়। ইংরেজি বর্ণানুক্রমে লিখছি।
1. Autistic:
একজন ব্যক্তি অটিস্টিক মানে তার অটিজম নামের ডেভেলপমেন্ট ডিজর্ডার আছে। এই ডিজর্ডারের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ আছে। অটিস্টিক শিশুরা সামাজিক যোগাযোগ স্থাপন করতে বেগ পায়, এরা প্রায়ই একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে, শব্দের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় অসহনশীলতা থাকতে পারে এদের। কিন্তু একজন অটিস্টিক ব্যক্তি কখনোই উন্মাদ কিংবা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন নন। আপনি যখন বুদ্ধিহীন কিংবা বিচিত্র বুঝাতে কাউকে অটিস্টিক বলে সম্বোধন করেন, তখন আপনার সীমিত জ্ঞান যেমন প্রকাশ পায়, তেমনি অটিস্টিক ব্যক্তিদেরকেও অপমান করা হয়।
2. Depression:
ডিপ্রেশন মানে মন খারাপ না। ডিপ্রেশন একটা মানসিক ডিজর্ডার যেখানে একজন ব্যক্তি স্থায়ীভাবে বিষন্নতা ও শূন্যতাবোধের ভেতর দিয়ে যান। ডিপ্রেশনের মাত্রাভেদে একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবন বিভিন্নভাবে অচল হয়ে যেতে পারে।
3. Feminist:
ফেমিনিস্টের বাংলা হচ্ছে নারীবাদী। অনেকে মনে করেন যেসব নারী বড় বড় কথা বলে তারা নারীবাদী, কিংবা যারা নারী অধিকার নিয়ে কথা বলেন তারা নারীবাদী। অনেকে এটাও ভাবেন যে নারীবাদ মানে পুরুষদের ঘৃণা করা। এর সব কটাই ভুল/অসম্পূর্ণ ধারণা। একজন ফেমিনিস্ট ব্যক্তি সকল জেন্ডারের সমতা চান। যেহেতু নারীর প্রতি বৈষম্য থেকে সমতার জন্য লড়াইটা শুরু হয়েছে, সেহেতু এর নাম হয়েছে নারীবাদ। কিন্তু নারীবাদী হতে পারেন নারী, পুরুষ কিংবা ভিন্ন জেন্ডারের যে কেউ। এখানে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা জেন্ডারের প্রতি কোনোরকম ঘৃণা জড়িত নেই। নারীবাদের শত্রু পুরুষ নয়। নারীবাদের শত্রু হচ্ছে পুরুষতন্ত্র। পুরুষতন্ত্র হচ্ছে একটা সিস্টেম যেখানে নির্ধারিত কিছু নিয়মের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভেদ বজায় রাখা হয়। একজন পুরুষও পুরুষতন্ত্রের ভিকটিম হতে পারেন এবং একজন নারীও পুরুষতান্ত্রিক হতে পারেন। পরেরবার যখন কাউকে নারী অধিকার নিয়ে কথা বলতে দেখবেন, আগে যাচাই করে নেবেন তিনি সব জেন্ডারের সমতা চান কি না। সমতা না চাইলে, ঘৃণার কথা বললে তিনি নারীবাদী নন।
4. Introvert:
ইন্ট্রোভার্টের বাংলা হচ্ছে অন্তর্মুখী। এটা কোনো মানসিক বা সামাজিক সমস্যা না। এইটা একটা পারসোনালিটি টাইপ। কিছু মানুষ হৈচৈ পছন্দ করে। কিছু মানুষ চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। যারা চুপচাপ থাকতে, একা থাকতে পছন্দ করে তাদের অনেকেই ইন্ট্রোভার্ট। এটা তাদের ব্যক্তিত্বের অংশ। যার ব্যক্তিত্ব যেমন তাতে সেভাবে গ্রহণ করুন।
5. Narcissist:
ফেসবুকে সেলফি দিয়ে ক্যাপশনে নার্সিসিস্ট লিখে নিজেকে খুব খুউল ভাবছেন? ভাইবেন না। নার্সিসিজম একটা পারসোনালিটি ডিজর্ডার। নার্সিসিস্ট ব্যক্তিরা প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক, ঈর্ষাপরায়ণ এবং দাম্ভিক হন। এরা অন্যের প্রতি কোনো সহানুভূতি ধারণ করেন না। আপনি যদি এমন না হয়ে থাকেন, তাহলে শুধু শুধু নিজের প্রতি ভালোবাসাকে নার্সিসিজমের নাম দিয়েন না। নিজের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা ভালো ব্যাপার। নার্সিসিজম ভালো ব্যাপার না। আপনি যদি সত্যিই নার্সিসিস্ট হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে বদলান। এটা গর্ব করার কিছু না।
6. OCD:
পুরো ফর্মটা হচ্ছে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজর্ডার। বাংলায় বলে শুচিবাই। ভীষণ খুঁতখুঁতে হওয়া, বারবার একই কাজ করা ওসিডির কিছু লক্ষ্মণ। কিন্তু খাবার, পোশাক কিংবা অন্যকিছু নিয়ে নির্দিষ্ট পছন্দ/অপছন্দ থাকা মানে এই না যে আপনার ওসিডি আছে। ওসিডি একটা গুরুতর সমস্যা। কথায় কথায় ব্যবহার করে শব্দটাকে খেলো করে দেবেন না।
7. Schizophrenia:
কারো কথা বা কাজ আপনার সাথে মিলছে না বলে তাকে স্কিজোফ্রেনিক বলবেন না, প্লিজ। স্কিজোফ্রেনিয়া একটা ভয়ংকর বাজে মানসিক রোগ। এই রোগে একজন মানুষ অসংলগ্ন চিন্তা করেন, কথা বলেন এবং কাজ করেন। একজন স্কিজোফ্রেনিক ব্যক্তি পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারেন না, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন না। আপনি যদি কোনো সত্যিকারের স্কিজোফ্রেনিক ব্যক্তিকে চিনে থাকেন তার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। কারণ মানুষটা নিঃসন্দেহে প্রচণ্ড কষ্টে থাকেন।
8. Secular:
ইদানীং দেখছি সেকুলারিজমকে নাস্তিকতার বিকল্প হিসেবে এবং সেকুলার শব্দটাকে গালি হিসেবে ব্যবহার করেন কেউ কেউ। সেকুলারিজম মানে ধর্মনিরপেক্ষতা। একজন সেকুলার ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন না। একটা রাষ্ট্র যখন সেকুলার হয়, তার মানে সেই রাষ্ট্রে সকল ধর্ম সমান মর্যাদা পায়। একজন নাস্তিক ব্যক্তিও একটা সেকুলার রাষ্ট্রে নিরাপত্তা ও সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু সেকুলারিজম মানে নাস্তিকতা না। আপনি নিজের ধর্ম পালন করে যদি ভিন্ন বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের সাথে সহাবস্থান করতে পারেন, তার মানে আপনি সেকুলার ধারার মানুষ।

এমন অপপ্রয়োগের শিকার শব্দ আরো আছে নিশ্চয়ই। ইন্টারনেটের যুগে তথ্য অত্যন্ত সুলভ। কোনো নতুন শব্দ ব্যবহার করার আগে চট করে গুগল করে নিন। তাহলে আপনাকে আর বোকা বোকা কথা বলে বিব্রত হতে হবে না। :)

(এই পোস্টটা প্রথমে ফেসবুকে লিখেছিলাম আমি। সেটা আশাতীত সাড়া পাওয়ায় ব্লগে টুকে রাখলাম, যাতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।)

বিজনেস ক্লাস

প্লেনের বিজনেস ক্লাস নিয়ে আমার আগ্রহ ছিলো অনেকদিন থেকেই। মধ্যবিত্ত বাঙালি যখন সরকারি সফরে বিজনেস ক্লাস পায়, তখন কায়দা করে টিকেটের ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে দেখেছি (ছবির মতো)।

বন্ধুর মা-বাবা হজ্জে যাওয়ার সময় যে বিজনেস ক্লাসে গেছেন সেই গল্প কায়দা করে বলতে শুনেছি। বাংলাদেশের একজন সেলিব্রেটি রাঁধুনিকে বলতে শুনেছি তিনি যখন বিজনেস ক্লাস থেকে বের হচ্ছিলেন তখন ইকোনমি ক্লাসের এক যাত্রী তার ছবি তুলে কী ভীষণ 'উদ্ধত' আচরণ করেছিল। এসব দেখে আমার জানার ইচ্ছা ছিলো বিজনেস ক্লাসের বিশেষত্ব। এবার এমিরাতস এয়ারলাইনস রীতিমতো যেচে পড়ে আমাকে বিজনেস ক্লাসে তুলে দেওয়ায় সেই ইচ্ছাটা পূরণ হলো। আমার মতো যাদের এ ধরনের হাভাতে কৌতূহল আছে তারা বাকিটা পড়তে পারেন। এবার আমি সফরের প্রথম অংশ এমিরাতসের ইকোনমি ক্লাসে উড়েছি, দ্বিতীয় অংশে উড়েছি বিজনেস ক্লাসে। এই দুইয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরব।



Space:
বিজনেস ক্লাসে বসার জায়গা বড়। সামনে পিছে, ডানে বামে সবদিকেই। সিট হেলিয়ে দিলে পেছনের যাত্রীর বুকের উপর চড়াও হতে হয় না। সুইচ টিপলে পা ছড়িয়ে দেওয়ার জায়গা তৈরি হয়ে যাবে। আরামে ঘুমানো যাবে। আমি সমস্যায় পড়েছি স্ক্রিন নিয়ে। জায়গা বেশি বলে টিভি স্ক্রিন বসার জায়গা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। শুরুতে আমার রিমোট কাজ করছিল না। ফলে টাচস্ক্রিন ছুঁয়ে ছুঁয়ে চ্যানেল বদলানোর জন্য আমাকে সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পিঠ বাঁকিয়ে স্ক্রিনের কাছে যেতে হচ্ছিল। ইকোনমি ক্লাসে স্ক্রিন ছোট হলেও একদম চোখের সামনে থাকে। সেই স্ক্রিনে আমি আরামে চারটা মুভি দেখে ফেলেছিলাম আগেরবার। বিজনেস ক্লাসে একটা দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
Privacy:
বিজনেস ক্লাসের প্রাইভেসি বেশি। দুই সিটের মাঝে হালকা দেয়াল থাকে। যদিও বিজনেস ক্লাসে আমার বাম পাশে বসা বাঙালি ভাইটি পুরো পথ দেয়াল ডিঙিয়ে আমাকে আড়চোখে দেখে গেছেন এবং আমার চ্যাগায় রাখা পায়ে লাথি দিয়ে দিয়ে টয়লেটে গেছেন। তবে তিনি ইকোনমি ক্লাসে সামনের সিটে বসা ভাইটির মতো সিটে হাত রাখতে গিয়ে বারবার আমার টিভি স্ক্রিনে হানা দিতে পারেন নাই।
Hospitality:
বিজনেস ক্লাসের ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টরা অতিরিক্ত আন্তরিক। সিটে বসতে না বসতেই এসে জিজ্ঞেস করবে আমি কিছু খাবো কি না। ইকোনমি ক্লাসে যেখানে চেয়েও পানি পাওয়া যায় না, গলা শুকিয়ে খটখটে হয়ে গেলে উঠে গিয়ে পানি আনতে হয়, সেখানে বিজনেস ক্লাসে যেচে এসে পানি টানি দিয়ে যাওয়াটা একটু বেশিই ইয়ে লাগে। একবার ধাক্কা লেগে আমার জুসসমেত গ্লাস ফেলে দিলাম মেঝেতে। ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট মিষ্টি হাসি দিয়ে এসে মুছেটুছে আরেক গ্লাস জুস রেখে গেল। আমি সরি টরি বলে অস্থির। সে মিষ্টি হেসে বললো, এটা কোনো ব্যাপার না। অথচ ইকোনমি ক্লাসে এক বাচ্চা আইলে বমি করে দিয়েছিল বলে ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট সেটা পরিষ্কার করতে করতে শক্তমুখে বলছিল, "Stay where you are. I am trying to clean it." ফ্লাইট এটেন্ডেন্টের কষ্ট দেখে সহানুভূতি হয়েছিল আমার। বিজনেস ক্লাসের ফ্লাইট এটেন্ডেন্টদের আদরযত্ন দেখে উলটা মরমে মরে গেছি।
Food:
বিজনেস ক্লাসে খাবারের মান এবং অপশন বেশি। ইকোনমি ক্লাসে প্ল্যাকেটজাত জুস দেয়। বিজনেস ক্লাসে দেয় ফ্রেশ জুস। বিজনেস ক্লাসে শ্যাম্পেইন থাকে। আরো থাকে ওয়াইন আর ককটেইলের অনেক অপশন। ইকোনমি ক্লাসে বড়জোর ওয়াইন থাকে। তাও সবখানে না। অ্যাপেটাইজার, মেইন কোর্স, ডেজার্ট সবকিছুতেই বিজনেস ক্লাসে অপশন বেশি। খাবারের সাজসজ্জাও বেশি।
Lavatory:
টয়লেট দুই ক্লাসেই এক। আমি বিজনেস ক্লাসে আরেকটু বড় টয়লেট আশা করেছিলাম।
Others:
ইকোনমি ক্লাসে খাবারের সাথে প্যাকেটজাত ওয়েট ওয়াইপ দেয় একটা করে। বিজনেস ক্লাসে ওঠার পরপরই দেয় একটা ভাপ দেওয়া ওয়েট টাওয়েল। খাবারের সাথে আসে আলাদা ন্যাপকিন। বিজনেস ক্লাসে খাবার দেওয়ার আগে ফ্লাইট এটেন্ডেন্টরা নিজ দায়িত্বে এসে টেবিল পেতে দিয়ে তাতে চাদর বিছিয়ে দেবে। ইকোনমি ক্লাসে কোনো চাদরের বালাই নাই। খাবার এলে নিজ দায়িত্বে টেবিল খুলে নিতে হবে। বিজনেস ক্লাসের হেডফোনের মান ইকোনমি ক্লাসের থেকে ভালো। বিজনেস ক্লাসের কম্বল দুই পরতের। ইকোনমি ক্লাসে এক পরতের। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইকোনমি ক্লাসে গুডি ব্যাগ দেয়, যার ভেতরে মোজা, আইপ্যাচ, টুথব্রাশ ইত্যাদি থাকে। বিজনেস ক্লাসে এই জিনিস দেয় নাই। আমি ভেবেছিলাম আরো ভালো মানের গুডি ব্যাগ হয়ত দেবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমি কি আবারো বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করতে চাইবো?
প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ডজন তিনেক ইকোনমি ক্লাস এবং একখানা বিজনেস ক্লাসের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, নিজের পয়সায় অদূর ভবিষ্যতে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণের সম্ভাবনা নাই। কয়েক ঘণ্টার জন্য তুলনামূলকভাবে একটু ভালো কম্বল, একটু ভালো খাবার, কয়েক ইঞ্চি বেশি জায়গা আর একটু বেশি আদরযত্নের জন্য এত টাকা খরচ করতে আমি এখনো প্রস্তুত না। বিশেষ করে টাকা দিয়ে আদরযত্ন কেনার ব্যাপারটা আমার মধ্যে অস্বস্তি জাগিয়েছে। এবার আমি ফ্রিতে বিজনেস ক্লাসে চড়ে বসেছি বটে। ফ্লাইট এটেন্ডেন্টরা তো সেটা জানত না। তারা তাদের কাজ করেছে। ইকোনমি ক্লাসে অভ্যস্ত আমি ক্লাস দিয়ে ভালো ব্যবহার পেয়ে শেখ সাদীর মতো অনুভব করেছি। এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা আপাতত নাই।